ক্লান্তি আসলে কি? ক্লান্তি দূর করার বিস্তারিত উপায়গুলো জানুন
মানুষ সহ সকল প্রাণীর ক্লান্তি রয়েছে। পৃথিবীতে এমন কোন প্রাণী নেই যারা ক্লান্তি অনুভব করেন না। আজকে আমরা ক্লান্তি দূর করার উপায় গুলো জানব। আপনার সকল প্রকার ক্লান্তি দূর করতে সমস্ত আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে।ক্লান্তি দূর করার আগে আপনাকে ক্লান্ত হওয়ার প্রকৃত কারণ জানতে হবে।
শুধুমাত্র কাজ করলে বা পরিশ্রমের ফলে আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়ি এ ধারণাটা ভুল।ক্লান্ত হওয়ার সঠিক কারণ জেনে, আপনার ক্লান্তি দূর করার টিপস গুলো জেনে নিন।ভূমিকা
সারাদিন আমরা অক্লান্ত পরিশ্রমের পরে ক্লান্ত হয়ে পড়ি। তখন আমাদের বিশ্রাম করার বা ক্লান্তি দূর করার প্রয়োজন হয়। আবার অনেকে সারাদিন শুয়ে বসে থেকে কোন প্রকার কাজ না করেও এমনি এমনি ক্লান্তি অনুভব করেন।
যখন কোন কাজে আমাদের মন বসে না, ভালো লাগে না, বিরক্ত লাগে, ক্লান্ত অনুভব করি, সেটাকেই আমরা ক্লান্তি বলে সংজ্ঞায়িত করে থাকি। এককথায় ক্লান্তি হল শক্তির অভাবের অনুভূতি।
ক্লান্তি বলতে আমরা সাধারণত দুই ধরনের ক্লান্তিকে বুঝে থাকি দৈহিক ও মানসিক। কিন্তু আপনি কি জানেন যে, বিভিন্ন ধরনের ক্লান্তি রয়েছে। যেমন,
- সামাজিক অবসাদ বা সামাজিক ক্লান্তি
- শারীরিক বা দৈহিক ক্লান্তি
- মানসিক ক্লান্তি
- ব্যথা ক্লান্তি
- দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা ক্লান্তি
- ভ্রমণ ক্লান্তি
- মানসিক অবসাদ
সামাজিক ক্লান্তি দূর করার উপায়
আমরা সামাজিক জীব। সামাজিকতা রক্ষার্থে আমাদের কখনো একজন লোকের সাথে অথবা অনেক লোকের সাথে কথা বলার প্রয়োজন হয়। একজন ব্যক্তির সাথে দীর্ঘ সময়ের জন্য কথা বলার পরে আমরা যে ক্লান্তি অনুভব করি সেটাই সামাজিক ক্লান্তি।টেক্সট মেসেজ বা সোশ্যাল মিডিয়ায় মন্তব্যের জবাব দেওয়াও একজন লোককে ক্লান্ত করে তুলতে পারে।
আবার, ভিডিও কল হল যোগাযোগের একটি নতুন উপায় এবং এর জন্য সম্পূর্ণ নতুন মাত্রার শক্তির প্রয়োজন। বিশেষ করে যারা প্রযুক্তি সচেতন নন বা মোবাইল ফোন সম্পর্কে ভালো জ্ঞান রাখেন না তাদের জন্য। একটি কল সেটআপ করা এবং স্ক্রিনে উপস্থিত হওয়া মানসিক চাপের কারণ হতে পারে।
শুধু মনে রাখবেন, আপনাকে একটি ভালো সময় কাটাতে হবে।কোন কিছু শেয়ার করার ইচ্ছা বা ভাগাভাগি করার ইচ্ছা মস্তিষ্কে সামাজিক মিথষ্ক্রিয়া বাড়িয়ে দেয়। মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করার উপায় গুলো চর্চা করে দেখতে পারেন। যেমন, ব্যায়াম করা, সঠিক খাবার খাওয়া, বিরতি নেওয়া, গান শোনা, ভালো ঘুমানো এবং ভালোভাবে জেগে ওঠা।
দৈহিক ক্লান্তি দূর করার উপায়
বিশেষজ্ঞদের মতে, সারাদিনের কাজের পর যদি পায়ে যন্ত্রণা অনুভব করেন অথবা শরীরে জোর পাচ্ছেন না, এমন মনে করেন, তাহলে গরম পানি ও ঠান্ডা পানি পাশাপাশি রেখে কিছুক্ষণ গরম পানিতে আবার কিছুক্ষণ ঠান্ডা পানিতে পা ভিজিয়ে রাখুন।গরম পানিতে মিশিয়ে দিতে পারেন অল্প নুন। মিনিট দশেক ফুটবাথ করলে শরীরের সমস্ত ক্লান্তি এক নিমেষে দূর হয়ে শরীর চাঙ্গা হয়ে ওঠে। ঘুমও ভালো হয়।
শরীর চাঙ্গা করতে দই শরবত তৈরি করে খেতে পারেন।পানি ১ গ্লাস, মিষ্টি দই-১ কাপ, গোলমরিচ গুঁড়া সামান্য, বিট লবণ ও লবণ স্বাদমতো, বরফ ও চিনি পছন্দমতো। মিশিয়ে ব্লেন্ড করুন, ব্যস দই শরবত তৈরি।এক গ্লাস পান করুন আর দৈহিক ক্লান্তি থেকে মুক্তি পান নিমিষেই।
মানসিক ক্লান্তি দূর করার উপায়
যখন আমরা দীর্ঘ সময় ধরে দুঃখ, রাগ, বিষন্নতা বা হতাশার মধ্যে থাকি তখন আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়ি। দীর্ঘ সময় ধরে কান্না করার ফলে আমাদের চোখগুলো ব্যথা করে। অনেক সময় আমরা কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়ি কারণ এই অনুভূতিগুলো অনুভব করার জন্য আমাদের অনেক শক্তির ব্যবহার হয়।
প্রথমে মনটাকে শান্ত করুন। যা গেছে তা আর ফিরে আসবেনা। মানসিক ক্লান্তি দূর করার জন্য আপনাকে রোজ পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে, ব্যায়াম করতে হবে, সুষম খাবার খেতে হবে, প্রয়োজনে মেডিটেশন করতে হবে এবং রিক্রেয়েশনাল কার্যক্রমে অংশ নিতে হবে।
ব্যথা ক্লান্তি দূর করার উপায়
ব্যথার কারণে রাতে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে, যার ফলে পরের দিন ক্লান্তি আসে। অন্য কাউকে সেই ব্যথা বোঝানোর চেষ্টা করা আরো ক্লান্তিকর হতে পারে। পরবর্তীতে তা মানসিক ক্লান্তি সৃষ্টি করতে পারে। কখনো কখনো ব্যথা থাকার মানসিক দিকটি আমাদের বিষন্ন করে তোলে এবং আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়ি।
নিয়মিত হলুদ খেলে বিভিন্ন ধরনের ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া সহজ হয়। শুধু হলুদের স্বাদ ভালো না লাগলে এক গ্লাস হালকা গরম দুধের সঙ্গে এক চা চামচ হলুদ মিশিয়ে খেয়ে নিন। পেশির ব্যথা কমাতে চাইলে ম্যাসাজের বিকল্প নেই।সঠিকভাবে ম্যাসাজ করতে পারলে উপকার পাওয়া যায়।ম্যাসাজ করলে শরীরের সেই স্থানে রক্ত চলাচল বাড়ে। ফলে ব্যথা অনেকটা কমে।
আদা খাওয়ার অনেকগুলো উপকারিতার মধ্যে একটি হলো এটি শরীরের বিভিন্ন ব্যথা কমাতে কাজ করে। আদায় আছে পর্যাপ্ত অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি গুণ। তাই ব্যথা দূর করতে চাইলে আদা খেয়ে সমস্যার সমাধান করতে পারবেন।পর্যাপ্ত পানি পান করুন। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা ক্লান্তি দূর করার উপায়
কখনো কখনো দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতার কারণে আমাদের ক্লান্তি অনুভব হয়। তার জন্য অন্য কোনও ব্যাখ্যা নেই। বিভিন্ন কারণে মস্তিষ্ক বা মেরুদণ্ডের ক্ষতির ফলে ক্লান্তি হতে পারে। এমআরআই ব্যবহার করে গবেষণায় দেখা গেছে যে MS (মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস) আক্রান্ত ব্যক্তিরা গড় ব্যক্তির চেয়ে বেশি শক্তি ব্যবহার করেন।
MS হল, একটা দীর্ঘস্থায়ী রোগ যেটা মস্তিষ্ক, স্পাইনাল কর্ড, এবং চোখের স্নায়ুকে প্রভাবিত করে।মূত্রাশয়ের সমস্যা এবং অসংযম এর কারণে বাথরুমে যাওয়ার জন্য আমাদের বেশি শক্তি ব্যবহার করতে হয়, বিশেষ করে রাতে। পেশীর খিঁচুনি, শক্ত হওয়া, ব্যথা বা হতাশাও শক্তি ব্যবহার করে এবং আমাদের শরীরকে ভিন্নভাবে প্রভাবিত করতে পারে।
উপরন্তু, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও ক্লান্তি সৃষ্টি করতে পারে।দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা ক্লান্তি দূর করতে আপনাকে অবশ্যই টেনশন ফ্রি থাকতে হবে। সবসময় চাপমুক্ত থাকতে চেষ্টা করুন। কারণ,চাপ আপনার শরীর ও মনকে চুরমার করে দেয়।
ভ্রমণ ক্লান্তি দূর করার উপায়
বিভিন্ন প্রকার পরিবহনে আমরা ভ্রমণ করি। যেমন বাস, ট্রেন,লঞ্চ,এরোপ্লেন,নৌকা ইত্যাদি। তবে কিছু পরিবহনে ভ্রমণ শরীর বেশি ক্লান্ত করে।আবার কিছু কিছু পরিবহনে ভ্রমণ করলে শরীর সাধারণত কম ক্লান্ত হয়। তবে ভ্রমণ করার এক সপ্তাহ আগে থেকে আমাদের প্রস্তুতি নেওয়া উচিত। ভ্রমণজনিত ক্লান্তি দূর করতে আমাদের ভ্রমণের আগে ও পরে কিছু নিয়ম মানতেই হবে।
যেমন, ভ্রমণের আগে থেকে ভালোভাবে ঘুমাতে হবে।ভালো খাবার অর্থাৎ স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে।তেলে ভাজা অস্বাস্থ্যকর খাবার কিছুতেই খাওয়া যাবেনা। ক্যাফেইন ও চর্বি জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। শরীর চাঙ্গা রাখতে হবে, মানসিক অবসাদ ঝেড়ে ফেলতে হবে। ভ্রমণের সময় বমি হলে শরীর আরও বেশি ক্লান্ত হয়ে পড়ে এজন্য আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া উচিত।
মানসিক অবসাদ জনিত ক্লান্তি দূর করার উপায়
এটি প্রচুর পরিমাণে মানসিক শক্তি ব্যয় করার ফলে আসে। যেমন ধাঁধা তৈরি করা, সমস্যার সমাধান করা এবং প্রশ্নের উত্তর দেওয়া ইত্যাদি। আপনি যদি গভীর রাতে এই ধরনের কাজ করেন তাহলে রাতে মানসম্মত ঘুমের অভাব সৃষ্টি হতে পারে এবং পরের দিন আপনাকে তা ক্লান্ত করতে পারে।একসঙ্গে একাধিক কাজ হাতে নিবেন না। তাহলে দিনের শেষে আপনার মাথায় আরও বেশি চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
- সংগীতের মধ্যে থাকুন।
- কাজ করার সময় কফি খেতে পারেন।
- শ্বাসের কিছু সহজ ব্যায়াম করুন।
- ঘুমের সঙ্গে আপোস করবেন না।
- প্রয়োজন হলে রুটিন মেনে চলুন।
- নিজেকে সময় দিন।
ক্লান্তি দূর করার খাবার
বাদাম ও বীজ আপনার শরীরের ক্লান্তি দূর করতে এবং ক্ষুধার বিরুদ্ধে লড়ার জন্য সেরা খাবার। তাই আপনার প্রতিদিনের খাবারে বাদাম ও বীজ রাখুন। এটি আপনার শরীরে স্বাস্থ্যকর পুষ্টি এবং শক্তি সরবরাহ করে ক্লান্তিভাব দূর করবে।
ক্লান্তি দূর করার ঔষধ (সাবধান⚠️)
ক্লান্তি নির্ণয়ের জন্য রোগীর সম্পূর্ণ চিকিৎসাগত ইতিহাস ও শারীরিক পরীক্ষা প্রয়োজন। হৃদযন্ত্র ও ফুসফুসের পরীক্ষাও করা হতে পারে। এছাড়াও চিকিৎসক রোগীর মানসিক সচেতনতা ও অন্ত্রের শব্দ ও ব্যথার পরীক্ষা করতে পারেন। সম্ভাব্য কোন অসুখের জন্য রোগী ক্লান্তিতে ভুগছেন তা জানতে একাধিক টেস্ট ও ইমেজিং স্টাডি করা হয়ে থাকে।
ক্লান্তির চিকিৎসা করার আগে, এর অন্তর্নিহিত কারণ নির্ণয় করা প্রয়োজন। কারণ জানা গেলে তার উপর নির্ভর করে এর চিকিৎসা শুরু করা যায়। চিকিৎসক এর জন্য ওষুধ দিতে পারেন, যেমন মানসিক সমস্যার কারণে ক্লান্তি হলে এন্টিডিপ্রেসেন্ট দেওয়া হয়। যথেষ্ট জলপান, পরিমিত ঘুম, সুষম খাদ্যগ্রহণ ও মানসিক চাপ কমানোর মতো কিছু সহজ পদ্ধতি ক্লান্তি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নিজে নিজে কখনোই ওষুধ গ্রহণ করা ঠিক নয়।
লেখকের মন্তব্য
এই সমস্যাগুলির মধ্যে কোনটি আপনার ক্লান্তির কারণ? নীচের মন্তব্যে ক্লান্তির সঙ্গে আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন। এই আর্টিকেলটি বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে তথ্য নিয়ে নিজের ভাষায় লিখা হয়েছে। কোথাও যদি কোন প্রকার ভুল খুঁজে পান নিচের কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url